আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও ১টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড নিয়ে ময়মনসিংহ-৪ আসন। এখানে মোট ভোটারের সংখ্যা ৬ লাখ ৫০ হাজার ২৮৪। গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে এবারের নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত। আর মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম। এ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
সর্বশেষ এ আসনে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছিল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালে। ওই নির্বাচনে বর্তমান প্রার্থী শান্তর বাবা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বিএনপির মোশাররফ হোসেনকে পরাজিত করেছিলেন। ২০১৪ সালে দশম এবং ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের জন্য ছেড়ে দেয়। ১৫ বছর পর এবার আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। তবে নৌকা ডোবাতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী তৎপর রয়েছেন। তারা মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে প্রকাশ্যে বা গোপনে কাজ করছেন। শামীমের ছোট ভাই মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হোসেন, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক রিপন, মহানগরের ৩৩ জন দলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে ২৯ কাউন্সিলর নৌকা প্রাথী শান্তর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, সহসভাপতি শওকত জাহান মুকুল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবীর, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নওশেল আহমেদ অনি, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল রহিম মিন্টুসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ অবস্থান নিয়েছেন ট্রাক প্রতীকের পক্ষে। সদরের ১১ ইউনিয়নে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের কমপক্ষে ৬ জন ট্রাক প্রতীকের পক্ষে রয়েছেন।
নৌকার সমর্থনে এবং নৌকা ডোবাতে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্পষ্টত বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। প্রায় প্রতিটি গণসংযোগ ও সমাবেশে তারা একে অপরকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। চলছে পালটাপালটি অভিযোগ। এতে ভোটের মাঠে দেখা দিয়েছে উত্তাপ। সংঘাতের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ট্রাক মার্কার সমর্থক মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফাহিম ফেরদৌস ফুয়াদ বলেন, সুখে-দুঃখে, আন্দোলনে আমিনুল হক শামীমকে কাছে পাওয়া যায়। তাই অনেক নেতাকর্মী তাকে সমর্থন দিয়েছেন।
নৌকার সমর্থক জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শাহরিয়ার মোহাম্মদ রাহাত বলেন, মোহিত রহমান শান্তর পক্ষে ময়মনসিংহ সদর ও শহরবাসী রয়েছেন। তারা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই জয় ছিনিয়ে আনবেন।
নৌকার সমর্থক জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উত্তম চক্রবর্তী রকেট বলেন, আমাদের আদর্শের প্রতীক নৌকা ভুলে গিয়ে স্বতন্ত্রে ভিড় জমাচ্ছি, তা মোটেও কাম্য নয়।
এ ব্যাপারে মোহিত উর রহমান শান্ত বলেন, ইনশাআল্লাহ নৌকা বিজয়ী হবে। তিনি অর্থের লোভ দেখিয়ে শক্তিশালী ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগকে বিভাজন না করার আহ্বান জানান প্রতিদ্বন্দ্বীদের।
অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, জেলায় প্রায় সব আসনে আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের বাধা নেই। তাদেরকেও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ভাবতে হবে। তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব দল সমর্থন করে না। যিনি বেশি ভোট পাবেন, তিনি জয়লাভ করবেন।
এ আসনে বিএনপির সাবেক নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি ও সাবেক পৌর মেয়র কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলুও শক্ত প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের মাঠে আছেন।