
সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি:
র্যাব,পুলিশ ও ডিবি পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে শিমড়াইল মোড়ে গত কয়েক বছরে ফুটপাতের দোকানদারদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জামাল উদ্দিন নামে এক চিহিৃত চাঁদাবাজ। চাঁদাবাজিকালে ইতিমধ্যে র্যাব, পুলিশ ও ডিবি পুলিশের হাতে কয়েকবার গ্রেফতার হয়ে জেল খাটার পরও একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি জামালের চাঁদাবাজি। সে জেলে অবস্থান করার সময় তার নিয়োজিত কয়েকজন সহযোগী চাঁদা উত্তোলন করেছেন। অবিলম্বে এসকল চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন দোকানীরা।
দোকানীরা জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমড়াইল মোড়ের কয়েকশত ফুটপাতের দোকান থেকে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাদাঁবাজ জামালের প্রতিনিয়তই চাঁদা আদায় করতেন। গেল চার বছর ধরে প্রায় তিন শতাধিক দোকান থেকে দৈনিক আশি থেকে নব্বই হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করতেন জামাল উদ্দিন ও তার বাহিনী। এক সময়ের মুরগী রিপনের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করছেন তিনি। মুরগী রিপন জেলে যাওয়ার পর শিমড়াইল এলাকার চাঁদাবাজিতে একচ্ছত্র অধিপতি বনে যান জামাল উদ্দিন। ফুটপাতের দোকানীদের সাথে কথা বলে আরো জানাগেছে, এই চাঁদার সিংহভাগ জামাল উদ্দিন নিজেই নিয়ে নেন।
র্যাব, থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের নামে প্রতিনিয়তই টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেলেও তাকে কেউ কিছ্ ুকরতে পারছেন না। এরই মধ্যে কয়েকদফা জামাল র্যাব, থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও আবারো ছাড়া পেয়ে আগের চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন তিনি। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পুলিশের হাতে ফুটপাতে চাঁদাবাজি করার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার জামাল উদ্দিন। এর পর র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১১ এর কাছে চাঁদাবাজির সময় হাতে নাতে গ্রেফতার হন জামাল উদ্দিন। কিছুদিন যেতে না আবারো আদালত থেকে বের হয়ে চাঁদাবাজিতে মেতেছেন জামাল উদ্দিন। এর কিছুদিন পরপরই আবার গ্রেফতার হন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে। জামাল উদ্দিন চাঁদপুর জেলার মতলব থানার শিকারীকান্দি এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে।
সে সিআইখোলা কাঠেরপুল এলাকার কামাল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুটপাত ব্যবসায়ী জানান, শিমরাইল মোড় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পাশে^ অবৈধভাবে গড়ে উঠা সকল ফুটপাত দোকান বারবার উচ্ছেদ করা হলেও জামালের নেতৃত্বেই আবারো ফুটপাত দখলে নেন হকাররা। প্রতিবার ফুটপাত উচ্ছেদের পর আবার পুনরায় বসতে জামাল উদ্দিনকে দিতে হয় প্রতি দোকান প্রতি দশ থেকে বিশ হাজার ও প্রতিদিন দোকান প্রতি তিন’শ থেকে চার’শ টাকা। প্রতিদিন প্রায় তিন’শ দোকান থেকে চাঁদা উত্তোলন করতো জামাল উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। এক ফল দোকানদার জানান, জামাল ও তার কয়েকজন সহযোগী প্রতিদিন আমাদের কাছ থেকে জোড় পূর্বক প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে হাজার হাজার টাকা উত্তোলন করছেন। আমরা তার দাবিকৃত চাঁদা না দিলে আমাদেরকে ভিন্নভাবে হয়রানিসহ মারধর করা হয়। মোবাইলে যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী জানান, আমরা চাঁদাবাজ জামাল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর নিকট এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছি। বিশাল বাহিনী নিয়ে সে হুমকি দিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকেন। তার সাথে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় আমরা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাই না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে জানান, এক সময় এই জামাল ভাত খাইতে ভাত পাইত না। সে আজ চাঁদার টাকায় নাকি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। প্রশাসনও তাকে কেন গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনছেন না। তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, কোথাকার কে জামাল যার বাপ দাদার নাম জিবনেও শুনিনাই। কতিপয় দূর্নীতিবাজ ব্যক্তির সহযোগীতায় বছরের পর বছর চাঁদা উত্তোলন করলেও লোক দেখানো অভিযান চালাচ্ছেন প্রশাসন। জেল থেকে বের হয়ে এসেই পূর্বের ন্যায় চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন জামাল ও তার সহযোগীরা। তাকে ক্রস ফায়ার দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জামালের সাথে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায় নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, চাঁদাবাজ জামাল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ইতিমধ্যে সে কয়েকবার র্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, পুলিশ প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে যদি ক্উে চাঁদা উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে খুব শিগ্রই কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ণ র্যাব-১১ এর পরিচালক লে:কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, জামাল নামে এক ব্যক্তিকে চাঁদা আদায়ের সময় হাতে নাতে গ্রেফতার করা হয়েছিলো তার বিষয়ে চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যে কোন সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।