নতুন বছরে নতুন চমক আসছে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগে
বির্তকিত ও অসাংগঠনিক নেতৃত্ব চায় না তৃনমূল
ডেমরার লোক ডেমরার কমিটিতে প্রধান্য দেয়ার দাবি।
ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের কমিটিতে গুরুত্ব পাচ্ছে ক্লীণ ইমেজের ত্যাগী ও প্রবীণ-নবীনের সমন্বয় জুটি
সালে আহমেদ,ডেমরাঃ
ক্লীণ ইমেজের নেতৃত্ব উপহারের মধ্যদিয়ে নতুন ইতিহাস গড়তে চাই ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগ।তাই সম্মেলনের পর থানা-ওয়ার্ড কমিটিতে এবার গুরুত্ব দেওয়া হবে দলের পরীক্ষিত, ত্যাগী ও প্রবীণ-নবীনদের। ইতিমধ্যে কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে প্রথমে ইউনিট এবং পরে থানা-ওয়ার্ড সমন্বয়ে সম্মেলন ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের নেতারা।এতে দু-একটি সম্মেলনে হট্টগোল-বিশৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনা হলেও বেশিরভাগ সম্মেলনের প্রশংসা করেছেন তৃণমূলের নেতারা।তাদের প্রত্যাশা লোক দেখানো কিংবা বড় গলায় কোনো বক্তব্যে দিয়ে কর্মীদের খুশি করার প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগের ‘হৃৎপিন্ড ’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। কিন্তু কোনো কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। থানা-ওয়ার্ডের কমিটিতে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে থাকবে সাবেক ছাত্রনেতা-নতুন মুখ।বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বিভিন্ন মামলা-হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং দলের জন্য ত্যাগী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতাদের কমিটিতে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের যে তালিকা করা হয়েছে, তাদের পদে রাখা হবে না। এখন প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডের পদ-পদবী প্রত্যাশীরা নেতাদের বাসা ও অফিসে ধর্ণা দিচ্ছেন এবং তাদের খুশি করার মধ্যদিয়ে সভাপতি/সম্পাদকের মতো গুরুত্ব¡পূর্ণ পদটি ছিনিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।তবে সম্মেলনের পর থানা-ওয়ার্ডে কারা নেতৃত্বে আসছেন এ নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই তৃণমূলের কর্মীদের মাঝে।চায়ের দোকান ও হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ সব আড্ডাস্থলে চলছে সম্ভাব্য নেতাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ব্যক্তি ও রাজনৈতিকভাবে সুন্দর ভাবমূতিসম্পন্ন এবং ত্যাগী নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করা হবে-এমনটিই প্রত্যাশাও সবার।গত ৩ সেপ্টেম্বর ডেমরা বিশ^বিদ্যালয় কলেজ মাঠে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মধ্যদিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করার লক্ষে কাজ শুরু করে দলটি এবং ২৪ অক্টোবর চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মধ্যদিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে। এরপর টানা তিন মাস যাবত যাচাই-বাছাইয়ের পর এখনো কোনো কমিটি দিতে পারেনি ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে ইতিমধ্যে কমিটি বানিজ্যসহ নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। যা রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অন্তত দেড় ডজন প্রার্থী তাদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন ।
জানা গেছে, সম্মেলনের পর থেকেই ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীরা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যার যার মতো যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উভয় পদের বিপরীতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। সভাপতি প্রার্থী হিসেবে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন সাতজন। তারা হলেন ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খাঁন মাসুদ, ঢাকা-৫ আসনের চারবারের এমপি প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার জেষ্ঠ্যপুত্র ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল,ডিএসসিসির ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আতিকুর রহমান আতিক,সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্ষীয়ান নেতা মো. শহিদুল ইসলাম,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নেহরীন মোস্তফা দিশি,অ্যাডভোকেট মো. মোজাম্মেল হক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর ইসলাম মোল্লা।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন ৯জন। তারা হলেন, ডিএসসিসির ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আতিকুর রহমান আতিক, ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. সিফাত সাদেকীন চপল,আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য নেহরীন মো¯তফা দিশি,ডিএসসিসির ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান পলিন ,সাবেক ডেমরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল বাশার, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মো. আতিকুর রহমান তোতা, আওয়ামী লীগ নেতা টিপু সুলতান মোল্লা, শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া ও রেবেকা সুলতানা।তবে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দুইটি করে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন নেহরীন মোস্তফা দিশি ও কাউন্সিলর আতিকুর রহমান আতিক।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, ঢাকা-৫ আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজন ক্লিন ইমেজের জননন্দিত নেতার, যারা নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে সর্বস্তরে কর্মীদের একত্রিত করে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগকে নতুন করে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে পারবেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সহযোগী প্রতিটি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে দলের অন্তঃকোন্দলের সমস্যা সমাধান করতে পারবেন এমন যোগ্যতাও তাদের থাকা চাই। যেহেতু ডেমরা ঢাকা মহানগরের দক্ষিণ সীমান্ত এলাকা, তাই শক্তিশালী কমিটি না হলে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আন্দোলন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।এক্ষেত্রে ডেমরা থানা কমিটিতে এলাকার বাইরের কাউকে নেতা নির্বাচিত করলে তা মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা।
ডেমরা থানার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, দলের সু-সময়ে অনেকেই স্থানীয় এমপি ও থানার সভাপতি/সম্পাদকদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে রাতারাতি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বনে গেছেন। অথচ আওয়ামী লীগের দু:সময়ে রাজপথে বিএনপি-জামাতের দু:শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে কাউকে দেখা যায়নি। তাই এবার তাদের দলের কোনো ধরনের পদ-পদবী দেওয়া হলে মেনে নিবেন না তৃণমূল আওয়ামী লীগ।তারা বলছেন, দলের পরীক্ষিত-ত্যাগী নবীন-প্রবিণের সমন্বয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী লীগের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডের কমিটি উপহার দিলে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হবে। আর বিএনপি-জামাত ও স্বাধীনতা বিরোধীদের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে কমিটি দিলে বয়কটের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে দুর্বল করা হবে।আর পদ প্রত্যাশীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের দু:সময়ে রাজপথে বিএনপি-জামাতের দু:শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে কাউকে দেখা যায়নি।তাই এবার তাদের দলের কোনো ধরনের পদ-পদবী দেওয়া হলে মেনে নিবেন না তৃণমূল আওয়ামী লীগ।
সভাপতি পদপ্রার্থী ৭০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী আতিকুর রহমান বলেন,বিগত আন্দোলন -সংগ্রামে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেছি।করোনার দুঃসময়ে ডেমরা বাসীর পাশে থেকে সর্বদা সাধারন মানুষ ও নেতাকর্মীদের সার্পোট দিয়েছেন বলে জানান তিনি।দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলাম।জননেত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে কাজ করবেন।দায়িত্ব পেলে ডেমরা থানা আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী ঘাটি হিসেবে তৈরি করবো।সুযোগ পেলে তৃনমূল কর্মীদের পাশে থাকার অঙ্গীকার প্রদান করেন।এসময় তিনি ডেমরা থানা কমিটিতে ডেমরার লোককে প্রধান্য দেয়ার আহবান জানান।কারন বিগত দিনে ডেমরাকে ব্যবহার করে একটি মহল স্বার্থসিদ্ধি পালন করেছে।
সাধারন সম্পাদক পদপ্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি সিফাত সাদেকীন চপল বলেন ,ডেমরা থানা কমিটিতে তরুন ও ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব আসলে দল এবং তৃনমূল কর্মীদের উপকার হবে কারন বিগত দিনে তৃনমূলের মূল্যায়ন করেন নি একটি মহল।দীর্ঘ ১৮ বছর কমিটি দিতে পারে নি এ থানাতে।সাবেক কমিটির অবহেলার কারনে ত্যাগীরা কমিটি হতে বঞ্চিত হয়েছে দীর্ঘ ১৮ বছর।সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতার দাবি যাকেই নেতৃত¦ দিবে অনন্ত তৃনমূল থেকে খোজঁ খবর নিয়ে দেয়ার উদাত্ত আহবান জানান।
ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল বলেন,দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে গতিশীল রাখতে দায়িত্ব পেলে তৃনমূলদের মূল্যায়ন করবো।ঢাকা-০৫ এর এর উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার প্রদান করেন।
আওয়ামী লীগ নেতা টিপু সুলতান মোল্লা,বিগত সময় ধরে দলের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে তাদের নিয়ে আতাত করে ডেমরা থানাকে দূর্বল সাংগঠনিক রূপ করে রেখেছে।ডেমরা থানার কমিটিতে সুযোগ পেলে আগে দলের ত্যাগী কর্মীদের রাজনীতিতে সংযুক্ত করার চেষ্টা করবো।দলের দুঃসময়ে অর্থ ও বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছি কিন্তু যারা আওয়ামী লীগের স্টেজ পুড়িয়ে দিয়েছে তারা আজ শক্ত দলের গুরুত্বপূর্ন পদ দখল করে আছে।দলের দুঃসময়ে কাউকে সাথে পাই নি।হামলা –মামলা খেয়ে ও অনঢ় অবস্থায় আছি।টিপু মোল্লা আরো ও বলেন,দল এবং প্রধানমন্ত্রীকে ভালোবাসার টানে আজ ও আশায় আছি ভালো কিছু দেখার জন্য।
ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খাঁন মাসুদ বলেন,পূনরায় যদি ডেমরা থানার সভাপতি হতে পারি তাহলে দূর্বলতাগুলো খুজেঁ খুজেঁ বের করে দলকে সাংগঠনিক গতিশীল করার চেষ্টা করবো। ইতিবাচক কাজ গুলো করার জন্য সর্বদা চেষ্টা করবা।তৃনমূল কর্মীদের নিয়ে পূর্বেও মতো মাঠে কাজ করার চেষ্টা করবো।থানার কমিটিতে দায়িত্ব পেলে ত্য্গাী ও সিনিয়র নেত্ববৃন্দকে সাথে নিয়ে দলকে উজ্জীবিত করার অপ্রাণ চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্ষীয়ান নেতা মো. শহিদুল ইসলাম,সুযোগ পেলে দল এবং তৃনমূল কর্মীদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো।কারন তৃনমূল বাচলে দল বাচবে।ঝিমিয়ে পড়া ডেমরা থানাকে পূর্নরুদ্ধার করবো।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, দুর্দিনে যারা দলের জন্য জীবন বাজি রেখেছেন এবং দলের প্রয়োজনে নিঃস্বার্থভাবে শ্রম দেওয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে কাজ করেছেন, আমরা কেবল তাদেরই নির্বাচিত করব। এ বিষয়ে তদবির করে কোনো লাভ হবে না। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, তদবির তো দূরের কথা, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের হাইপ্রোফাইল নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বয়ে প্রার্থীদের বিষয়ে বিচার-বিবেচনা করা হবে। এক্ষেত্রে সাংগঠনিক সব নিয়ম অনুযায়ী ডেমরা থানা গঠন করা হবে।