রাজধানীর কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের অনুমতির জন্য গত বছর আগস্টে ওই ইউনিটের নেতারা গিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর কাছে। তিনি নেতাদের কথা শুনে বিষয়টি নিয়ে তার ছেলে আহমেদ ইমতিয়াজ মন্নাফী গৌরবের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেন। গৌরব দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। কিন্তু নেতারা গৌরবের সঙ্গে কথা বলতে যাননি। আর গত ছয় মাসে মেলেনি সম্মেলনের অনুমতিও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, মন্নাফী সভাপতি হলেও তার ছেলেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। দলের ভার অলিখিতভাবে গৌরবকেই দিয়ে রেখেছেন তিনি।
একই অভিযোগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের বিরদ্ধেও। নেতাকর্মীরা বলছেন, পদ-পদায়ন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তার ছেলে রেজাউল কবির রকি। তিনি কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই ছেলে এরই মধ্যে নিজেদের মতো করে গড়ে তুলেছেন বলয়। তারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন দলীয় সব কর্মকাণ্ড। পাশাপাশি অপরাধ জগতেও প্রতিষ্ঠা করেছেন কর্তৃত্ব। সমকালের পক্ষ থেকে বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রাডো ৩০ বছর ধরে ওই থানার বিভিন্ন ইউনিট ও ওয়ার্ডের নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। তার অভিযোগ, নগর নেতৃত্ব তাকে এখন পাত্তাই দেয় না। তার থানা ও ওয়ার্ডের কর্মসূচিতে তার নাম থাকে না। সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিট সম্মেলনের দাওয়াতপত্রে সভাপতি হিসেবে তার নাম দেওয়া হয়নি। দলের সদস্য সংগ্রহের ফরমের বই চাইলেও তাকে দেওয়া হয়নি।
রাডো সমকালকে বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের ছেলে এখন দল চালায়। এজন্য তারা আমার মতো পুরোনোদের ডাকে না। বিষয়টি নিয়ে নগরের সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও বলেছেন, ওই এলাকা (চকবাজার) সাধারণ সম্পাদকের। তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।’
চারটি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও এই প্রতিবেদককে বলেছেন, তাদের কিছু না জানিয়েই দলের নামে নানা কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থানা আর ওয়ার্ডের পদধারী নেতাদের না জানিয়েই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দুই ছেলের অনুসারীরা কর্মসূচি পালন করে। সামনের সারিতে থাকে চিহ্নিত চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, মাদক মামলার আসামিসহ বিতর্কিত ব্যক্তিরা। ১২ জানুয়ারি ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিট সম্মেলনে বিতর্কিতদের দেখে অতিথি হয়ে আসা কেন্দ্রীয় নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে দলের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমে গৌরব ও রকির অনুসারীরা ভিন্ন দলের কর্মী থেকে শুরু করে মামলার আসামি ও বিতর্কিতদের দলে ঢুকিয়ে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছেন। তারাই দখল, চাঁদাবাজি, ভবন নিয়ন্ত্রণ, পরিবহনের চাঁদাবাজি ও মাদকের নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সব ধরনের অপকর্ম করে চলেছেন। সুবিধাভোগী কিছু নেতা তাদের সহায়তা দিচ্ছেন। ভুক্তভোগী সাধারণ লোক তো দূরের কথা, পদধারীরাও অপদস্থ হওয়ার ভয়ে এসব নিয়ে মুখ খোলেন না।